জৈন্তাপুরের লাল শাপলায় মুগ্ধ পর্যটকরা

abc

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের ডিবির হাওরের স্বচ্ছ পানির বুকে লাল শাপলা মুগ্ধ করছে পর্যটকদের। ফুটে থাকা শাপলা যেন প্রেয়সীর হৃদয়কাড়া হাসি।

এটি বাংলাদেশের একটি অনন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, ৯০০ একর জায়গায় লাল শাপলার সৌন্দর্যে সজ্জিত। তবে আধুনিকতার আড়ালে আজ অনেক বুনো সৌন্দর্য যেন বিলীন।

জৈন্তাপুরে রয়েছে বাংলার নীল নদ খ্যাত লালাখাল, সিলেট গ্যাসকূপ (জলা টিলা), চা বাগান, লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। তাই বিদেশীরা এখন আসেন এসব জায়গা দেখতে। নিজের ব্যস্ত জীবনে একটু খানি শান্তির পরশ নিতে।

কালের ধারায় প্রকৃতি যেন হেসে ওঠে প্রাণের সজীবতায়। রঙ, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়েই হাজির হয় সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড় আর ওপরে বিশাল নীলাকাশ। ঝকঝকে নীল আকাশের বুকে ধবধবে সাদা মেঘের ভেলা। শিশিরভেজা শাপলা ফুল অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে ঘাসের বুকে হাসে। অতিথি পাখির কিচির মিচির শব্দ মনে হয় শ্বেত বসনা এক ঝাঁক তরুণী যেন নৃত্য করছে। নানাবিধ ফুলের শোভা আর শস্য শ্যামলতা। ভোরের সূর্যোদয়ের আলো যখন শাপলার পাপড়িতে পড়ে, তখন পুরো বিল যেন এক স্বপ্নপুরীতে পরিণত হয়। বিলের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে থাকা লাল শাপলা যেন প্রকৃতির নিজস্ব একটি চিত্রকলা।

বর্ষার পানিতে বিলে শাপলার মেলা শুরু হলে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা এই সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর লাল শাপলার বিলে ছুটে আসে। রোদের তাপে নুইয়ে পড়ে বলে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে সূর্য ওঠার আগেই লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসে দেশের নানা প্রান্তের প্রকৃতিপ্রেমীরা।

জৈন্তাপুরের ডিবি, ইয়াম, হরফকাট ও কেন্দ্রী বিলসহ চারটি বিলে ৯০০ একর জায়গা জুড়ে এই লাল শাপলার রাজ্য। প্রতিবছর শরতের শেষ দিকে শাপলা ফুটতে দেখা যায়। গত কয়েক দিন থেকে এখানে নতুন ফুল ফোটায় বাড়ছে পর্যটক। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে হাওর ঘুরে কাছ থেকে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে সারি সারি নৌকার ব্যবস্থা।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন ভোরে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত প্রকৃতিপ্রেমীরা ফুটে থাকা লাল শাপলার সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসছে জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে। কেবল সৌন্দর্য উপভোগই নয়, এই লাল শাপলা হয়ে উঠেছে এই গ্রামের বেকার যুবকের জীবিকার উৎস। এই বিলে থাকা নৌকা চড়ে দর্শনার্থীরা যেমন খুশি হচ্ছে, তেমনি প্রতিদিন যুবকের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।

লাল শাপলার বিলে ঘোরার জন্য স্থানীয়ভাবে নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকায় ভ্রমণ করার সময় শাপলার মাঝে যেভাবে সাদা বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, শালিক ও হাঁসে দল খেলা করে, তা প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জয় করে নেয়।

দর্শনার্থী নেহাল আহমদ বলেন, ‘আমি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থেকে এখানে লাল শাপলা দেখতে এসেছি। দেখে অনেক ভালো লাগল। তবে একটি কারণে আমার হতাশা। ডিবির হাওরের সৌন্দর্য রক্ষা না করে তারা সেখানে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ রোপন করছে। অনতিবিলম্বে এই গাছগুলো অপসারণ করে হাওরকে হাওরের মতো রাখতে দিন।’

শিক্ষার্থী রাকিবুর ইসলাম সাজিদ বলেন, ‘আমি এখানে প্রথম এসেছি। বিলের শাপলা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। বিনোদনের একটা জায়গা হয়েছে। সবাই তাদের ইচ্ছামতো ছবি তুলছে। বিলের মাঝখানে যাতায়াতের ব্যবস্থা নৌকা থাকায় অনেক ভালো লেগেছে। এখানকার যোগাযোগের ব্যবস্তা ভালো তাই দর্শনার্থীও ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে।’

ঘুরতে আসা আব্দুল মুমিন বলেন, ‘বউকে সাথে নিয়ে লাল শাপলা দেখতে এসেছি। অনেক দিন ধরে ইচ্ছা লাল শাপলার সাথে ছবি তুলব। ভোরবেলায় লাল শাপলাগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, দেখতে খুবই সুন্দর লাগে।’

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ‘ডিবির হাওরে সবসময় আমাদের টহল টিম থাকে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা সদাতৎপর রয়েছি।’

সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট থেকে জাফলংগামী বাসে আসতে হবে জৈন্তাপুর বাজারে। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত-টমটম বা সিএনজিচালিত-অটোরিকশায় সরাসরি বিলে যাওয়া যাবে। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা আর টমটম বা অটোরিকশার ভাড়া জৈন্তাপুর বাজার থেকে ৩০ টাকা করে।

এছাড়া সিলেট নগরী থেকে সরাসরি বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত-অটোরিকশা অথবা লেগুনা রিজার্ভ করেও যাওয়া যাবে ডিবির হাওরে। আর হাওরে নৌকা নিয়ে ঘুরতে হলে এক ঘণ্টার জন্য খরচ করতে হবে ৪৫০ টাকা। সূত্র : নয়া দিগন্ত।