ঢাকার কাছেই শাপলার রাজ্য

abc

শাপলা ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। তবে রাজধানীবাসী শাপলার সৌন্দর্য সহজেই উপভোগ করতে পারেন না। এ বিষয় নিয়ে যারা আফসোস করছেন, তারা চাইলে গাজীপুরে গিয়ে দেখে আসতে পারেন শাপলার বিল। কাপাসিয়ার বারিষাব ইউনিয়নের নরাইট বিলে প্রতিবছরই ফোটে শাপলা ফুল।

সকাল, দুপুর, বিকেল সব সময় লাল শাপলার সমারোহ যেন এক প্রাকৃতিক স্বর্গ। সবুজের মাঝে লাল শাপলার বিচরণ দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সবাই এখন একে শাপলা বিল নামেই চেনে।

সূর্যের স্বর্ণোজ্জ্বল রশ্মি পানিতে পড়তেই কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় বিলের সৌন্দর্য। বছরের এই সময়ে যারা ঢাকার আশপাশে থাকেন, ছুটে আসেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ছোট্ট এই গ্রাম এখন ভ্রমণপিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু।

জুলাই থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়। বিলের সঙ্গে যাদের বাড়ি, শাপলা তুলতে কিংবা মাছ ধরতে কলাগাছের তৈরি ভোরকা বা ভেলা, তাল গাছের তৈরি কুন্ধা ও ছোট নৌকাই তাদের একমাত্র বাহন। এক পলকে মনে হবে, কোনো ক্যানভাসে আঁকা লাল শাপলার আহা কি চমৎকার চিত্র।

এই বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলা বেশি লাল ও সাদা শাপলাকে শাপলা বলা হলেও বেগুনি শাপলাকে এলাকার মানুষ সন্দি বা সন্ধি বলে ডাকে।

বিলের যত ভেতরে চোখ যায়, ততই লালের আধিক্য সবুজের মধ্যে এ যেন অটোমান সাম্রাজ্যের জেনেচেরি সৈনিকের দল। একপর্যায়ে মনে হবে শাপলার রাজ্যে হারিয়ে গেছেন। দেখা মিলবে, অনেক মানুষের কেউ কেউ মুঠো ভরে শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ ফটোসেশন করছেন। শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, জীবিকারও মাধ্যম। বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কিছু পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে।

বিলে ভ্রমণের জন্য চাইলে স্থানীয়দের কাছ থেকে ছোট নৌকা ভাড়া করা যায়। বিলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভূত হবে। যেন এই তো শুধু আমার সোনার বাংলাদেশ নয়, সুখের ঠিকানা। এত কিছুর মাঝে আবার দেখা মিলবে অনেক পাখি।

বক, মাছরাঙা, শালিক, চড়ুইসহ নাম না জানা পাখি এসে বিলের মাঝে কিচিরমিচির করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। যারা ঢাকার আশেপাশে থাকেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন।

কম খরচে সহজে যাওয়ার জন্য উত্তম জায়গা এটি। এই বিলে নৌকায় চড়ে কাঁটাতে পারবেন সুন্দর মুহূর্ত। এই বিলের সৌন্দর্য আপনার ক্লান্তি কেরে নিয়ে উৎফুল্ল দিয়ে পূর্ণ করে দিবে ক্লান্তির আবরণ।

কিভাবে পৌছাঁবেন শাপলা বিলে?
যারা ঢাকা থেকে এই শাপলার রাজ্যে যেতে চান, তারা মহাখালী থেকে সম্রাট বাসে চালা বাজার গিয়ে নামবেন। চালা বাজার থেকে অটোরিকশা অথবা সিএনজি রিজার্ভ করে সরাসরি শাপলা বিলে চলে আসতে পারেন।

অথবা বর্জ্জাপুর বাজারে নেমে গাড়ি নিতে পারেন কিংবা পশ্চিম দিকের পথধরে হেঁটে চলে আসতে পারেন চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পাশেই দেখা মিলবে পদ্মফুলের সঙ্গে এরপরই আপনার কাঙ্খিত স্থান শাপলা রাজ্য।

অন্য বাসে আসতে চাইলে দ্বিতীয় পথটি হলো অনন্যা, উজানভাটি, জালসিঁড়ি টিকিট কাউন্টার থেকে আমরাইদ বাজারের টিকিট কাটতে হবে। বাস আপনাকে এয়ারপোর্টে-টঙ্গী-গাজীপুর চৌরাস্তা- রাজেন্দ্রপুর- কাপাসিয়া- তরগাঁও হয়ে আমরাইদ বাজার নিয়ে আসবে।

আমরাইদ বাজারে যাওয়ার পর আপনাকে বাস থেকে নামতে হবে। এবার পূর্বদিকের রাস্তা ধরে গেলে গিয়াসপুর বাজার ভায়া জলিল মার্কেট পৌঁছে যাবেন। জলিল মার্কেটে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে।

এবার চাইলে অটোরিকশা নিতে পারেন কিংবা উত্তর দিকের রাস্তা দিয়ে হেঁটে বা আপনার নিজস্ব যানবাহনে করে পৌঁছে যেতে পারেন শাপলা বিলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে ভিড় করছেন সেখানে।


আশপাশে আরও অনেক সুন্দর জায়গায় আছে, সময় থাকলে সে গুলোও ঘুরে দেখতে পারেন। প্রয়োজনে গুগলের সাহায্য নিতে পারেন ওয়েলফেশন অফিস রোড ধরে সামনে গেলেই পেয়ে যাবেন অনেক সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর সব স্থান।

যেমন- ১০০ বছর যাবত কারোদের অধীনে থাকা কারোর টেক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এক মন মুগ্ধকর স্থান। প্রায় দুই যুগ পূর্বে প্রতিষ্ঠিত সৌদিয়া বড় মসজিদ, সেখানে ওয়েলফেশন অফিসের উত্তর পাশে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকা দুই যুগ পূর্বে নির্মিত ইটের তৈরি মিনার।

ইতিহাসের স্মৃতি বহন করা শাহী মসজিদ ও লোহাদির লোহার খনি- যদিও অল্প কিছু নিদর্শনই দেখতে পারবেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায়ই হারাতে বসেছে এসব। ধাঁধা চর’সহ ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহাম্মেদ এর বাড়িতেও।
লেখা : তৌফিক সুলতান, জাগো নিউজ