মনে করি আসাম যাবো (পর্ব ৫, শেষ)

abc

বেলা ১১টায় আমাদের ফিরতি ট্রেন আগরতলা পর্যন্ত। নোথাও থেকে বের হওয়ার আগে অনেক ছবি তোলা হলো। জায়গাটা আসলে এত সুন্দর! আমরা যখন হাফলং স্টেশনে পৌঁছালাম, আমাদের সাথে দেখা হলো সেই বাঙালি ভদ্রলোকের যিনি আমাদের অটো ঠিক করে দিয়েছিলেন পিলেকুল যাওয়ার জন্য। আমাদের দেখেই জানতে চাইলেন, আমরা যেতে পেরেছিলাম কিনা।

সবকিছু দেখে এসেছি বলার পর কি অবাকটাই না হলেন! স্টেশনের এক হোটেল থেকে ছোলা-পুরি দিয়ে নাস্তা করে নিলাম। দোকানের ছেলেটা আমাদের কাছে বাংলাদেশের টাকা দেখতে চাইল। মোস্তাক নোটগুলো দেখাল। ছেলেটা বলল, ‘আমাকে ২০ টাকার নোট দাও, আমি তোমাকে ২০ রুপি দেই।’

২০ টাকার নোটটা তাকে এমনিতেই দেয়া হলো। পরপরই তার মুখে যে হাসিটা ছিল তা একবারে দেখার মতো! সে আমাদের চা খাওয়াল। এর মাঝে ট্রেন চলে আসে। বিদায় নিয়ে ট্রেনে উঠলাম।

এবার অবশ্য খালি পাইনি। সুন্দর একটা বাঙালি ফ্যামিলি ছিল আমাদের সাথে। দু’টি মিষ্টি বাচ্চা ছিল ওদের। ট্রেন যখনই টানেলে ঢুকছে, ওরা ‘ঠাকুরকে’ ডাকছে।

দেখতে বেশ লাগছিল! আগরতলায় বিয়েতে যাচ্ছিল ওরা সবাই। ওদের সাথে একটু গল্প করে, একটু খেয়ে, একটু ঘুমিয়ে সন্ধ্যার দিকে পৌঁছে গেলাম আগরতলা। ট্রেন এক ঘণ্টা লেট ছিল।

আগেরবার শহরের বাইরে ছিলাম। এবার তাই ইচ্ছা বটতলা থাকার। বটতলায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে রুম নিলাম। হোটেলটা আগরতলা সিটি সেন্টারের কাছেই, রাস্তার উল্টাদিকে। বেশ সুন্দর এবং সার্ভিসও ভালো। রুফটপ রেস্টুরেন্ট আছে। রেস্টুরেন্টে খবর নিয়ে জানা গেল, রাত ১০টা পর্যন্ত খাবার সার্ভ করে ওরা।

ভাবলাম বাইরে থেকে ঘুরে এসে এখানে রাতের খাবার খাব। বাইরে গিয়ে এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতেই পেয়ে গেলাম ডমিনোজ। আমি আর মোস্তাক পিজ্জা খেলাম। তেহজীব পিজ্জা খুব একটা পছন্দ করে না, আবার হোটেলের রেস্টুরেন্টে ভাত-মাছ খেতেও আগ্রহী না। কী খাবে জিজ্ঞেস করাতে বলল, ‘চিকেন খাব।’ ডমিনোজে জিজ্ঞেস করলাম আশপাশে চিকেন কোথায় পাওয়া যাবে। তখন ওখান থেকে কেএফসির লোকেশন দিয়ে দিলো। বের হয়ে গেলাম কেএফসিতে। সেখানে চিকেন খাওয়া হলো।

আমাদের হোটেলের পাশেই ছিল এক বিয়েবাড়ি। ওদের সেন্টারগুলোর আলাদা করে নাম দেখিনি। বেশিভাগের বাইরেই বিয়েবাড়ি লেখা থাকে। ভেতরটা খোলা জায়গা। তো এই বিয়েবাড়ির গেটে দুই পাহারাদারের বেশভূষা ছিল নজর কাড়ার মতো। একবার ইচ্ছা হচ্ছিল যাই বিয়ে দেখে আসি। পরে যদিও হোটেলে ফিরে যাই।

পরদিন সকালে উঠে হোটেলের রুফটপে নাস্তা করে নিলাম, কম্পলিমেন্টারি ছিল রুমের সাথে। আজ আমরা বাংলাদেশ ফিরব। ভাবলাম, ফেরার আগে উজ্জয়ন্ত প্যালেসটা দেখে যাই। সকাল সোয়া ১০টায় খোলে এই প্রাসাদ।

উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত একটি জাদুঘর ও ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক প্রাসাদ। প্রাসাদটি ১৮৯৯ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে মহারাজা রাধা কিশোর মাণিক্য দেব বর্মন নির্মাণ করেছিলেন এবং এটি ইউরোপীয় শৈলী দ্বারা অনুপ্রাণিত বাগান দিয়ে ঘেরা দুটি হ্রদের তীরে অবস্থিত।

১৯৪৯ সালের অক্টোবরে ভারতে ত্রিপুরার একীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি শাসক মাণিক্য রাজবংশের বাড়ি ছিল। ১৯৭২-৭৩ সালে ত্রিপুরা সরকার রাজপরিবারের কাছ থেকে প্রাসাদটি ২৫ লাখ রুপিতে কিনেছিল এবং জুলাই ২০১১ পর্যন্ত রাজ্য বিধানসভার দফতর ছিল। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ এখন একটি রাজ্য যাদুঘর। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)

অনেক কিছু দেখার আছে এই যাদুঘরে। এখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলাদা একটা গ্যালারি আছে। যুদ্ধের সময়কার শরণার্থী শিবিরের ছবি, গল্প সবকিছু আছে। চোখের পলকে দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেল যাদুঘরেই।

১২টার দিকে বের হয়ে ভাবলাম কিছু খাওয়া দরকার। সামনেই পেলাম পিজ্জাহাট। আরেক দফা পিজ্জা খাওয়া হলো। এরপর হোটেল থেকে ব্যাগ নিয়ে অটো ধরে সোজা বর্ডারে। আধা ঘণ্টায় বর্ডার পার হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে গেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখান থেকে উঠলাম ঢাকার বাসে।

এদিকটার রাস্তা একেবারেই খারাপ। রীতিমতো ধুলায় ধূসরিত হয়ে অবশেষে ফিরে এলাম নিজের শহরে। 

ছয়দিনের এই ট্যুর‍টা এখন পর্যন্ত আমাদের জীবনের সেরা ট্যুর। আল্লাহ যখন কিছুর দায়িত্ব নেন, এভাবেই সব পেয়ে যাই আমরা। ‘অতএব, তুমি তোমার রবের কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?’

কেউ যেতে চাইলে জোসেফ দাদার সাথে যোগাযোগের জন্য নিচের নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন অথবা মেসেজ দিতে পারেন। জোসেফ- +৯১ ৮৮২২৪ ৯৯৫১৬, তুমজাং, ডিমা হাসাও, আসাম।
লেখা : তামান্না আজমী

মনে করি আসাম যাবো (পর্ব ১)

মনে করি আসাম যাবো (পর্ব ২)

মনে করি আসাম যাবো (পর্ব ৩)

মনে করি আসাম যাবো (পর্ব ৪)