বোয়ালিয়া ঝর্ণা আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের

abc

ঝর্ণার রাজ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এবার যোগ হলো বোয়ালিয়া নামে নতুন ঝর্ণা। অন্য ঝর্ণা থেকে অনেকটা ব্যতিক্রমী এই ঝর্ণা আবিষ্কার হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। নতুন এই ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন শত শত ভ্রমণবিলাসী মানুষ। এখানে ছোটবড় কমপে পাঁচটি ঝর্ণা এবং অনিন্দ্যসুন্দর একটি পাথুরে ঢাল আছে যার নাম উঠান ঢাল। এ ট্রেইলের মূল ঝর্ণা হলো বোয়ালিয়া এবং এ ঝর্ণায় যাওয়া অপোকৃত সহজ। বোয়ালিয়া ঝর্ণার বিশেষত্ব হলো এ ঝর্ণার আকৃতি অদ্ভুত ধরনের। এর আকৃতি অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো এবং বোয়াল মাছের মাথার মতো বলে হয়তো নাম হয়েছে বোয়ালিয়া।

বোয়ালিয়া ভারী বর্ষায় খুব মারাত্মক রূপ ধারণ করে এবং এ সময়টাতেই এ ঝর্ণাটি সবচেয়ে সুন্দর। মূল ঝর্ণার পানি যেখানটায় পড়ে সেটা অনেকটা গুহা কিংবা গভীর খাদের মতো। ভরা বর্ষায় সাঁতরে এই ঝর্ণায় যেতে হয়। ঝর্ণার ওপরে আরো ছোট ছোট ঝর্ণা আছে এবং ঝিরিপথ খুবই সুন্দর। তবে বোয়ালিয়ার ওপরে যাওয়াটা খুবই বিপজ্জনক এবং ভরা বর্ষায় প্রায় অসম্ভব।

বোয়ালিয়া ট্রেইলের মূলত দুইটা পার্ট, উত্তর-পূর্ব আর দণি-পূর্ব। দণি-পূর্বে বোয়ালিয়া যেটি খুব বেশি দূরে না। তবে উত্তর-পূর্বে ট্রেইলে বিভিন্ন নামের আরো চার-ছয়টি ছোটবড় ঝর্ণা রয়েছে।

বেশিভাগ ভ্রমণপিপাসু বোয়ালিয়া দেখে চলে আসে কিন্তু উত্তর দিকের ছড়া হয়ে উঠান ঢাল কিংবা নহাতিকুম ঝর্ণা পর্যন্ত যায় না। অবশ্য উঠান ঢালে যেতে হলে খুব দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। পুরো পথটা যেতে হয় ছড়া দিয়ে হেঁটে হেঁটে।

বর্ষাকালে ছড়ায় প্রচুর পানি থাকে। এমনকি কোথাও কোথাও একেবারে বুক সমান পানি। এই ছড়ায় প্রচুর বালু আর বন্ধুর অনেক পাথরের কারণে হাঁটা অনেক কষ্টসাধ্য। তার ওপর ভয়ঙ্কর বাঁশের কঞ্চি কিংবা গাছের ডাল। এই ছড়াটা বেশ অপরিষ্কার মনে হয়েছে। সম্ভবত এ পথে যাতায়াত কম বলে পাথরগুলো মারাত্মক পিচ্ছিল। আঁকাবাঁকা এই ঝিরিপথে প্রচুর বাঁশঝাড় চোখে পড়ে। পথে ছোট ছোট ঝর্ণার দেখা মেলে।

ঝিরিপথ হয়ে এক ঘণ্টা হাঁটার পর উঠান ঢালের দেখা মিলবে। এ ঢালটা অসম্ভব রকমের সুন্দর। পাহাড়ের বুকে পাথরের আস্তরণ আর পানি নিচের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে কলকল করে, এমন সুন্দর দৃশ্য দেখলে যে কারোরই মন জুড়াবে।

উঠান ঢালের পরের পথটা খুবই ভয়ঙ্কর তবে অসম্ভব সুন্দর। বড় বড় পাথর আর ছোট ছোট কুমের সমাহার। এই পথটা খুবই পিচ্ছিল। প্রায় ১০ মিনিট কঠিন পথ পাড়ি দিলে নহাতিকুম ঝর্ণা পাওয়া যায়। এই ঝর্ণার উচ্চতা খুব বেশি নয় কিন্তু বেশ চওড়া। পুরো ঝর্ণা বেয়ে যখন পানি পড়ে তখন এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অনেকের মতে নহাতিকুমের পরেও আরো ঝর্ণা আছে। না জানি এ পথে আরো কতটা রহস্য আর সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।

কথা হয় বোয়ালিয়া ঝর্ণায় ঘুরতে যাওয়া একদল তরুণের সাথে। যাদের নেশা মিরসরাইয়ের নতুন নতুন ঝর্ণায় বিচরণ। তাদের একজন হলেন সোনালি স্বপ্ন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মঈনুল হোসেন টিপু। তিনি বলেন, বছরের দুই ঈদ কিংবা যেকোনো ছুটিতে তারা বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়ান। বিশেষ করে এখানকার ঝর্ণাগুলো অসাধারণ। একে একে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া, বাওয়াছড়া, রূপসী ঝর্ণা বেড়ানো হয়েছে। এই প্রথমবার এসেছি বোয়ালিয়া ঝর্ণায়। এই ঝর্ণাও এক কথায় অসাধারণ। তবে যাতায়াত কষ্টকর। যাতায়াত পথ আরো সহজ হলে পর্যটক অনেক বাড়ত বলে জানান তিনি। 

তিনি আরো বলেন, ঝর্ণায় যাওয়ার আগে বা পরে ব্র্যাক পোলট্রি ফার্মের পূর্ব দিকে পাহাড়ি সড়কটি একটু ঘুরে এলে ভ্রমণটা পূর্ণতা পাবে। এই সড়ক ধরে ফটিকছড়ি যাওয়া যায়। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়ক আর সবুজের সমাহার যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

যেভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই সদরে গাড়ি থেকে নামতে হবে। এরপর মিরসরাই বাজার হয়ে পূর্ব দিকে সিএনজিতে জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়ায় ব্র্যাক পোলট্রি ফার্ম অর্থাৎ পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে নামতে হবে। সেখান থেকে ছড়া ধরে কিংবা পায়ে চলা পাহাড়ি পথ ধরে কিছুটা হাঁটলেই বড় ছড়া পাওয়া যাবে। সেখান থেকে উত্তরে গেলে উঠান ঢাল এবং নহাতিকুম ঝর্ণা আর দণি-পূর্বে গেলে বোয়ালিয়া ঝর্ণা পাওয়া যাবে।

সতর্কতা
এই ট্রেইলে ভয়ঙ্কর সব জোঁকের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ভরা বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের মাঝে পড়লে বিপদ আর ছড়ায় পানির পরিমাণও বেশি থাকে। পাথরগুলো খুবই পিচ্ছিল আর বাঁশের প্রচুর কঞ্চি এবং গাছের ঢাল পুরো পথ জুড়ে। সাবধানে পথ পাড়ি দিতে হবে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

থাকা ও খাওয়া
মিরসরাই সদরে পার্কইন রেস্টুরেন্ট, বারইয়ারহাটে কাশবন ও গ্রিণপার্ক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে থাকা ও খাওয়ার জন্য পর্যটন স্পট থেকে এক ঘণ্টার পথ চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান ও অলঙ্কার মোড়ে রয়েছে কুটুম্ববাড়ি রেস্তোরাঁ। থাকার জন্য রয়েছে এখানে মায়ামী রিসোর্ট ও অলঙ্কারে রোজভিও আবাসিক হোটেল।
লেখা : এম মাঈন উদ্দিন (নয়া দিগন্ত)