প্রথমবারের মতো অন্নপূর্ণার শীর্ষে উড়ল বাংলাদেশের পতাকা

abc

প্রথমবারের মতো লাল-সবুজের পতাকা উড়ল মাউন্ট অন্নপূর্ণার চূড়ায়। বাংলাদেশী এভারেস্টজয়ী পর্ববতারোহী ড. বাবর আলী জয় করেছেন পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অন্নপূর্ণা-১। এ অভিযানে বাবরের সাথী ছিলেন ক্লাইম্বিং গাইড ফূর্বা অংগেল শেরপা।

আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোরে তিনি চূড়ায় পৌঁছান। গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেন এই অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান এবং নেপালের অভিযানের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মাকালু অ্যাডভেঞ্চারের সত্ত্বাধিকারী মোহন লামসাল।

বাবর আলীর সংগঠন ও এই অভিযানের আয়োজক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ থেকে সোমবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের দশম শীর্ষ পর্বত এবং অন্যতম কঠিন পর্বত ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ এর শীর্ষে প্রথমবার উড়ল আমাদের লাল-সবুজের পতাকা।

বাবর ইতোমধ্যে সুস্থাবস্থায় ক্যাম্প-৩ এ নেমে এসেছেন বলেও জানানো হয়েছে ফেসবুক পোস্টে।

বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালে গিয়েছেন ২৪ মার্চ। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ২৬ মার্চ কাঠমান্ডু থেকে বিমানে উড়ে যান পোখারা। এরপর কিছু পথ গাড়িতে ও বাকি পথ হেঁটে ২৮ মার্চ পৌঁছে যান বেসক্যাম্পে। এক দিন বিশ্রাম নিয়েই পরদিন চড়তে শুরু করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নিতে। ক্যাম্প-১ (৫২০০ মিটার) এ দু’রাত এবং ক্যাম্প-২ (৫৭০০ মিটার) এ এক রাত কাটিয়ে ২ এপ্রিল বাবর নেমে আসেন বেসক্যাম্পে।

সাধারণত এই সময় শুরু হয় ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষার পালা। কিন্তু বাবর নেমে এসেই আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানতে পারেন, সেই অনুকূল আবহাওয়া থাকবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। তাই পরিকল্পনা মোতাবেক ৩ এপ্রিল আবার চূড়ার দিকে উঠতে শুরু করেন তিনি। ওইদিন ক্যাম্প ১-এ থেকে পরদিন উঠে যান ক্যাম্প ২-এ। এর মধ্যেই শুরু হয় তুষারঝড়। প্রতিকূল আবহওয়ার মধ্যেও বাবর পৌঁছে যান ক্যাম্প ৩-এ (৬৫০০ মিটার)। সাধারণত ৭ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প তৈরি করে পর্বতারোহীরা চূড়ায় আরোহণের চূড়ান্ত পদক্ষেপ (সামিট পুশ) নেন। কিন্তু আবহাওয়া বিবেচনায় বাবর আলী ক্যাম্প-৩ থেকেই সেই পদক্ষেপ ৬ এপ্রিল রাতে।

অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে পৌঁছানোর মাধ্যমে বাবর আলী বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে। ওর কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস অধ্যবসায়ের প্রতিফলন এই সাফল্য। আমরা আশা করি এই অর্জন বাংলাদেশের পর্বতারোহণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।’

উচ্চতায় দশম হলেও কিন্তু কৌশলগতভাবে অন্যতম কঠিন পর্বত হিসেবে বিবেচিত এই পর্বত একদিকে আছে শীর্ষে। এর সফল সামিটের বিপরীতে মৃত্যুর হার প্রায় ১৪ ভাগ, যা ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিল ৩২ ভাগ! অর্থাৎ গত মৌসুম পর্যন্ত এই পর্বত সামিট করেছেন ৫১৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের।

১৯৫০ সালের ৩ জুন ফ্রান্সের এক দলের মরিস হেরজগ এবং লুইস লেচেনাল এই পর্বত চূড়া প্রথম স্পর্শ করেন, যা যেকোনো আট হাজারি শৃঙ্গে প্রথম মানব সাফল্যও বটে। ওই হিসেবে এই বছরই অন্নপূর্ণা-১ প্রথম সামিটের প্ল্যাটিনাম জুবিলি। অথচ এই ৭৫ বছরের মধ্যে ২০০৯ সালে অন্নপূর্ণা-৪ এ একবার বাংলাদেশী অভিযান হলেও অন্নপূর্ণা-১ এ এটিই প্রথম অভিযান এবং প্রথমবারেই এলো সাফল্য।

বাবর আলীর অন্নপূর্ণা-১ অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ভিজ্যুয়াল নীটওয়্যার্স লিমিটেড, ভিজ্যুয়াল ইকো স্টাইলওয়্যার লিমিটেড, এডিএফ এগ্রো, ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ব্লু জে।

পর্বতারোহী বাবর আলী পেশায় চিকিৎসক। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক। গত বছর প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে একই অভিযানে বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ উচ্চতার লোৎসে পর্বত জয় করেন।

তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে ২০২২ সালে অন্যতম কৌশলগত চূড়া আমা দাবলাম শীর্ষ স্পর্শের নজির গড়েন।

বাবর চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার নজুমিয়া হাটের লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ৫১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।