একজন হিমলাল দাই

চারপাশে তখন কেবলই উঁচু উঁচু সব দানবীয় পাহাড়। মার্দি হিমাল ট্রেক এর ভিউ পয়েন্ট (4200 m.) থেকে কিছুটা নিচে নামার কারণে সাদা পাহাড় বেষ্টনীর ভেতর সবুজ পাহাড়গুলো স্পষ্ট। সিঁড়িগুলো কখনো দৃষ্টিতে পড়ছে, আবার কখনো পড়ছে না। খাড়া পাহাড়ে প্যাঁচানো সিঁড়ি, তাই হয়তো এমন।
নামতে নামতে বিশ্রামের প্রয়োজনে মোটামুটি অল্প সমতল জায়গাতে এসে থামলাম। আমি আর শাহিন ভাই, সাথে দু’জন পোর্টার হিমলাল ও শৈলাস। অসম্ভব ভালো মানুষ তারা দুজন। বেশ খেয়াল রেখেছেন আমাদের। পানি লাগবে কিনা, শরীর খারাপ লাগছে কিনা, মাথায় ব্যথা হচ্ছে কিনা- এসব জিজ্ঞেস করতেই থাকতেন।
থপাস করে বসেই শুয়ে পরলেন শাহিন ভাই, সাথে আমিও। পা কি আর চলে বলুন!
হিমলাল আমাকে বললেন, ‘থোরাসা পানি পিও।’
আমি থার্মাল ফ্লাস্কটা হিমলাল দাইয়ের থেকে নিয়ে অল্প পানি দিয়ে গলাটা ভিজালাম। পানি কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আছে। ঠান্ডা হবেই বা না কেন? রাত ৪টা বাজে হাইক্যাম্প (3550m.) থেকে ফ্লাস্কে গরম পানি নিয়ে বের হয়েছি। মার্দি হিমাল বেইজ ক্যাম্প (4500m.) থেকে নেমে ভিউ পয়েন্ট (4200m) থেকেও ঘণ্টাখানিক পথ নিচে। আর এখন বাজে বেলা ১১টার মতো।
আরো খানিক পথ নেমে তারপর হাইক্যাম্প। সেখানে পানির অনেক দাম। এক লিটার গরম পানি ৩৫০ রুপি।
আবারো মাটিতে শুয়ে পরলাম। আকাশ দেখছি, কী সুন্দর চকচকে আকাশ।ডানে তাকালেই মাছাপুছরের শৃঙ্গ জ্বলজ্বল করছে। মন ভরে দেখলাম। তবে আর নড়তে মন চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যাই। পায়ের ক্ষত আর শরীর ব্যথার জন্যই হয়তো এমন মনে হচ্ছে।
একদিকে মন চায় থেকে যাই, আর অন্য দিকে ঠান্ডা এত বেশি যে মনে হয় এক্ষুনি নেমে যাই। এমন সময় শৈলাস দাই কয়েকটা ছবি আমাদের তুলে দিলেন।
যাই হোক এবার নামার পালা। এখান থেকে নামার দু’টি রাস্তা আছে। একটা কম পথের, তবে বেশ বিপজ্জনক। আরেকটা অনেক অনেক সিঁড়ি ভাঙ্গা পথ। হিমলাম কম পথেরে রাস্তাটা দেখানোর সাথে সাথে আমার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। যদিও ইতোপূর্বে আমি বেশ কয়েকবার এমন পথে নেমেছি। তবে আমার পায়ের যে অবস্থা, তাতে এই রাস্তায় আমি কেন আমার ভূত এলেও ভয় পাবে। এত সরু আর ঝুরঝুরে মাটি। তাও আবার একেবারে পাহাড়ের কিনারা ঘেঁষে। কিন্তু অন্যদিকে সিঁড়ি দেখে আবার গলা শুকায়।
শাহিন ভাই তো এক কথায় না করে দিলেন যে এই পথে যাবেন না। সমোঝোতায় আমরা সিদ্ধান্ত নেই আমরা সিঁড়ি ভেঙেই নামব। তারপর আস্তেধীরে নেমে এলাম হাইক্যাম্পে। সেখানেই আজকে আমাদের দুপুরের খাবার খেতে হবে টিম লিডার জানালেন।
দুপুরের খাবার খেয়েই যে আবারো ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেড়ুতে হবে বাদল ডাডা র উদ্দেশে। সেখানেই রাতের আবাস আজ।